সড়ক নয়, যেন চষা জমি

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০১৬

সড়ক নয়, যেন চষা জমি

20889465তিন থেকে চার হাত গভীর গর্তে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকা পড়েছে। চালক কোনোভাবেই গর্ত থেকে যানটি তুলতে পারছেন না। এভাবে মিনিট দশেক সময় চলে যায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে ভেতরে বসে থাকা চার যাত্রী নেমে অটোরিকশাটির পেছন দিক দিয়ে ঠেলতে শুরু করেন।
যাত্রীদের মিনিট দশেকের প্রচেষ্টায় যানটি গর্ত থেকে তুলে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ততক্ষণে পানি ঢুকে পড়ায় অটোরিকশাটি আর চালু করতে পারেননি চালক। এ দৃশ্য সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের ধোপাগুল এলাকার গত ৩১ মার্চ বেলা সাড়ে তিনটার। সড়কের ৩২ কিলোমিটার অংশের প্রায় পুরো এলাকার পিচঢালাই উঠে গেছে। এ কারণে প্রতিদিন এমন দুর্ভোগ সহ্য করেই যাত্রী ও চালকদের এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিশাল গর্ত। তাতে কাদাপানিতে একাকার। দেখে মনে হতে পারে কোথাও মাছ চাষের জন্য পুকুর আবার কোথাও বীজ রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে কোনো রকমে হেলেদুলে যান চলাচল করছে। চার বছর ধরে মহাসড়কটির এমন করুণ অবস্থা।
মহাসড়কের ধোপাগুল, ছালিয়া, সালুটিকর, বর্ণি, থানা সদর, লাছুখাল, টুকেরবাজার, তৈমুরনগর, পারুয়াবাজার, ভোলাগঞ্জ এলাকার অবস্থা খুবই নাজুক। এসব এলাকায় সড়কের বিভিন্ন অংশে তিন থেকে চার হাত গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে পুরো সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে এসব অংশে সারাক্ষণ ধুলা ওড়ে এবং বৃষ্টির সময়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়।
গত ৩১ মার্চ মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ১৩টি ট্রাক, ৩টি যাত্রীবাহী গাড়ি এবং ২২টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিকেল চারটার দিকে ধোপাগুল এলাকায় ৩০ গজের মধ্যে একটি ট্রাক ও একটি পিকআপ বিকল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ট্রাকের চালক মো. মুহিন শেখ বলেন, ‘খুলনা থেকে পাথর নিতে ভোলাগঞ্জে এসেছিলাম। ফিরতি পথে চাকা বিকল হয়ে পড়েছে।’ পিকআপের চালক মতিউর রহমান বলেন, ‘খানাখন্দে পড়ে প্রায়ই গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে পড়ে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী কয়েকজন চালক জানিয়েছেন, দেশের সবচেয়ে বড় পাথরকোয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে অবস্থিত। এ কারণে এ সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক চলাচল করে। এর বাইরে জেলা শহর সিলেটে পৌঁছার জন্য গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষও এ সড়ক ব্যবহার করে থাকে। অথচ প্রায় চার বছর ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় থাকলেও এটি পুনর্নির্মাণের কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সদ্য বিজয়ী চেয়ারম্যান শাহ জামাল উদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়ক হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। কোনো উপায় কিংবা বিকল্প সড়ক না থাকায় মানুষজনও বাধ্য হয়ে সড়কটি ব্যবহার করছে। এ রকম খানাখন্দময় সড়ক হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনস্বার্থেই সড়কটি জরুরি ভিত্তিতে পুনর্নির্মাণ করা উচিত।’
২০১৪ সালের মে মাসে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়কটি সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে এটিকে ‘ক্যানসার আক্রান্ত সড়ক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে গত বছরের ২১ নভেম্বর তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কের পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে মার্চ মাস পেরিয়ে গেলেও সে নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কটি পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া এখন সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছে। এরই মধ্যে দরপত্রপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সেটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করলেই নির্মাণকাজ শুরু হবে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

ফেসবুকে সিলেটের দিনকাল