সিলেট ৩রা মার্চ, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:০৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৬
সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান সবুজের খোলস ছেড়ে হলদে হওয়ার আগেই বৃষ্টির জলে ডুবে যাচ্ছে। তাই কষ্টে ফলানো সোনার ফসল গোলায় তুলতে চিন্তিত কৃষকদের কাঁচা ধানই কাটতে দেখা গেছে। বৃষ্টির পানি না সরলে অধিকাংশ হাওরেরই বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে দুই লাখ ২১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। পুরো ফসল গোলায় উঠলে এ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদিত হতো। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় ফলনও এবার অন্য বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে। এখন ধান পাকার সময়। হঠাৎ চার দিনের বর্ষণ দুর্যোগ ডেকে এনেছে হাওরে। বৃষ্টির পানিতে ডুবছে অধিকাংশ ফসল। সরেজমিন বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, হাওরের অধিকাংশ বোরো ফসলই এখন পানিতে ডুবো ডুবো অবস্থায় আছে। দ্রুত পানি না সরলে বোরো ধান ক্ষতির মুখে পড়বে বলে কৃষকরা জানান। এতে লোকসানে পড়বে হাওরের কৃষকরা।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বর্ষণে জগন্নাথপুর, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বড় হাওরগুলোর ফসল প্রায় নিমজ্জিত হয়ে আছে। অন্যান্য উপজেলার অবস্থাও একই রকম। কাঁচা ধান দুর্যোগের মুখে পড়ায় বড় ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা ও ধরমপাশার বিভিন্ন হাওরের নিচের অংশের কিছু ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অন্যান্য এলাকার হাওরেরও নিচের জমির কিছু ধান কাটা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
সদর উপজেলার রাবারবাড়ী গ্রামের কিষানি মমজান বিবি, স্বামী আব্দুস সাত্তার, মেয়ে হাসিনা বেগম, মেয়েজামাই ময়না মিয়াসহ নাতি-নাতনি নিয়ে বাড়ি খালি রেখে এসেছেন দেখার হাওরের সাফাতারি অংশে। হাওরের বড় বাঁধের কান্দায় (এখন পরিত্যক্ত বাঁধ) ধানের মুঠো (আঁটি) জড়ো করছেন তিনি। কান্দায় অস্থায়ী খলা তৈরি করে কিছু ধানও শুকাতে দিয়েছেন। শ্রমিকরা ধান কেটে জাঙ্গালে রাখছে, সপরিবারে সেই ধান কান্দায় তুলছেন তাঁরা। ক্ষণে ক্ষণে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী রোদে দেওয়া ধান নেড়েচেড়ে দিচ্ছেন। পাশেই দেখা গেল আরো কয়েকজন বধূ ধানখলা তৈরি করছেন। বোরো ধান গোলায় তোলার প্রস্তুতি হিসেবে হাওর-ভাটির কিষানিরা এখন হাওরের কান্দায়-জাঙ্গালে খলাঘর নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তবে কষ্টের ফসল বৃষ্টির জলে ডুবতে বসায় কৃষকের সঙ্গে তাঁরাও চিন্তিত। বড়বাঁধকান্দায় আরো কয়েকজন কৃষককে দেখা গেল নিচু এলাকা থেকে কেটে আনা আধাপাকা ধান মেশিনে মাড়াই করে গরুর গাড়িতে করে বাড়িতে পাঠাতে।
কিষানি মমজান বিবি বলেন, ‘জামাইসহ বাড়িতে আমাদের মেয়ে বেড়ানিত (বেড়াতে) আইছিল (এসেছিল)। আউরের (হাওরের) এই অবস্থা দেখে মেয়ে আমার ঘরে থাকতে পারেনি। স্বামী-ছেলেমেয়েসহ আউরে আইয়া (এসে) আমরার কাজে সাদ (সঙ্গ) দিচ্ছে।’ মমজান বিবি জানান, তাঁদের প্রায় ২০০ একর জমির পুরোটাই এখন বৃষ্টির জলে নিমজ্জিত। জমিগুলো হাওরের নিচু অংশে থাকায় তাঁরা কাঁচা ধানই কেটে তুলছেন বলে জানান।
তাঁর স্বামী আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘জমিনের ধান বৃষ্টির পাইন্যে ডুবাইলার। আধাপাকা ধান কাটার মানুষও মিলছে না। জনপ্রতি দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে তিনজন শ্রমিক ক্ষেতে লাগাইছি। এখন সপরিবারে আমরাও আইসা কাজে লাগছি।’ তিনি জানান, ৩০ শতক জমি চাষ করতে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকার ধান পাওয়া এখন কঠিন। বন্যা, বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকের পুরোটাই ক্ষতি বলে তিনি জানান। এ কারণে কৃষকরা ধান চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
হালুয়ারগাঁও গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক জহির মিয়াকে দেখা গেল তাঁর ছেলে ও আরেক শ্রমিক নিয়ে কোমরপানিতে নেমে আধাপাকা ধান কাটছেন। তিনি জানান, এই ধান না কাটলে দু-তিন দিন পরে সব নষ্ট হয়ে যাবে। তাই নষ্ট হওয়ার আগেই আধপাকা ধান কেটে তুলছেন। তিনি বলেন, ‘আউরের ধান ইবার ডুবরায় ধরেছে (হাওরের ধান এবার বৃষ্টির মুখে পড়েছে)। এখন ডুবরায়, হীলে নের গি (বৃষ্টিতে ও শিলা পাথরে নষ্ট করে দিচ্ছে)।’ বোরো ধান লাগিয়ে এখন কৃষকের খরচ ওঠে না বলে তিনি জানান।
আরেকটু এগোতেই দেখা গেল পেশায় গাড়িচালক আব্দুল মুকিত শ্রমিকের অভাবে তাঁর ভাই, ভাতিজাকে নিয়ে কোমরপানিতে নেমে আধপাকা ধান কাটছেন। পাশেই তাঁর ভাতিজা পানি থেকে ধানের মুঠো নৌকায় তুলছে। আব্দুল মুকিত বলেন, বৃষ্টিতে নিমজ্জিত আধপাকা ধান না কাটলে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শ্রমিকের জন্য বসে না থেকে নিজেরাই ধান কাটতে নেমেছি।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, এবারের বোরো মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। হঠাৎ বর্ষণ এসে আধাপাকা ফসল ডুবিয়ে নিচ্ছে। বৃষ্টির পানি না সরলে বাম্পার ফলন ব্যাহত হবে। অনেক উপজেলায় হাওরের নিচু এলাকার কিছু জমি নিমজ্জিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরো এক সপ্তাহ পর হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। এখন অল্প জমিতে যে ধান পেকেছে তা বিচ্ছিন্নভাবে কাটছেন কৃষকরা। পুরো ফসল গোলায় তুলতে পারলে এবার সুনামগঞ্জের হাওর থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd