২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০১৬
প্রকাশিত: ১১.১০.১৬, মঙ্গলবার: ভারতের পর্যটন নগরী গোয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থা বন্ধে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি মুখ্য আলোচ্য (টপ এজেন্ডা) হিসেবে থাকছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও অস্ত্রের যোগান বন্ধে কার্যকর উপায় নিয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সরকার প্রধান পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হবে। সঙ্গত কারণেই সেখানে আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ (কানেক্টিভিটি) ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টিও এজেন্ডায় স্থান পাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, আগামী ১৬ই অক্টোবর হাসিনা-মোদি তাৎপর্যপূর্ণ ওই বৈঠক হওয়ার সময়ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক আউট রিচ সামিটে অংশ নিতে আগামী ১৬ই অক্টোবর ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা ওই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ব্রিকস ও বিমসটেক জোটের ১১ শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে যৌথ আউটরিচ মিটিংয়ের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। মূল অধিবেশনের সাইড লাইনে হোস্ট কান্ট্রির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের বৈঠক চাওয়া হয়েছে। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুচিও অংশ নিচ্ছেন। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনের সাইড লাইনে নিউইয়র্কে সুচির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে। আর গোয়া সম্মেলনের ঠিক আগের দিনেই ঢাকা সফর করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। এ কারণে গোয়ায় ওই দুই নেতার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একান্তে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। এছাড়া নেপাল ও ভুটানের তরফে দেশ দু’টির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে গোয়ায় শেখ হাসিনার বৈঠকের আগ্রহ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, দিল্লিস্থ বাংলাদেশ মিশন বৈঠক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের সময়ক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সেই বৈঠকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে করণীয় বিশেষ করে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হবে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ দুই দেশের সহযোগিতায় ব্যাপক কার্যক্রম রয়েছে। কিন্তু দিনে দিনে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের ধরন এবং কৌশল পাল্টাচ্ছে। সে হিসেবে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় শীর্ষ পর্যায়ে নিয়মিত যোগাযোগ, তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া এবং শেয়ার করা, একই সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত যে কোনো অপ-তৎপরতা চটজলদি রুখে দেয়ার বিষয়ে উভয়ের প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস রোধে যে সহযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে তাতে দুই দেশের নেতৃত্বই ‘সন্তুষ্ট’ উল্লেখ করে সেগুনবাগিচার এক কূটনীতিক বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কৌশলী আক্রমণ মোকাবিলা বিশেষ করে তাদের অর্থায়ন এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রের যোগান বন্ধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শীর্ষ নেতাদ্বয়ের মধ্যে আলোচনা এখন সময়ের দাবি। গোয়া সম্মেলনের সাইড লাইনে অনুষ্ঠেয় হাসিনা-মোদি বৈঠকে সেটিই আলোচনা হবে। পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ, মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি, পূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশসহ বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর রেল, সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বাড়ানোসহ মাল্টি মোডাল কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠাসহ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়েও সেখানে আলোচনা হবে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় অসম্পাদিত চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের বিষয়েও কথা হতে পারে দুই শীর্ষ নেতার মধ্যকার বৈঠকে। গত বছর জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় ছিটমহল হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেই সময়ে দুই দেশের মধ্যে ২১টি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সই হয়। সেগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়েও কথা হতে পারে। তিস্তার দিকে চেয়ে আছে বাংলাদেশ। গোয়ায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে অতীতের আলোচনার ধারাবাহিকতার পাশাপাশি এজেন্ডায় বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে মর্মে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। ওই প্রকল্পের জমি সংক্রান্ত বিষয়াদির নিষ্পত্তি এরই মধ্যে হয়ে গেছে। বাণিজ্যিক বিস্তারের স্বার্থে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর ওই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি বলে দিল্লি ও কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের সমস্যা উল্লেখ করে সমপ্রতি আনন্দবাজারে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে- সীমান্তের অনেকটা অঞ্চল এখনো অরক্ষিত। ফলে রাতের অন্ধকারে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকছে। তাদের অস্ত্রশস্ত্র আমদানির রাস্তাও বদলেছে। তারা অনলাইনে অস্ত্র কিনে ডাক বা কুরিয়ার সার্ভিসে পৌঁছে দিচ্ছে। হালকা ও আকারে ছোট এসব অস্ত্র এমনভাবে প্যাক করা হচ্ছে যা স্ক্যানারেও ধরা পড়ছে না। দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় সেই বিষয়গুলোও প্রাধান্য পেতে পারে। উল্লেখ্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা- ৫ রাষ্ট্রের জোট ব্রিকস। যার বর্তমান চেয়ারম্যান ভারত। অন্যদিকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের কারিগরি ও অর্থনৈতিক জোট বিমসটেক। বাংলাদেশ ওই জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বিমসটেকের অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। আঞ্চলিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই জোটেই ‘ভারত’ সক্রিয় সদস্য হিসেবে রয়েছে। তাদের আয়োজনে এবারের ব্রিকস সম্মেলনে এবং তার পরদিনের ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ মিটিং দুই জোটের মধ্যে সেতুবন্ধনের সহায়ক হবে বলে আশা আয়োজক দিল্লির। তাছাড়া সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিতের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ওই আয়োজনের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে বলেও মনে করছেন কূটনীতিকরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
সহ-সম্পাদক : জুমা কবীর মীম
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও অনামিকা এ/৩৪ পূর্ব শাহী ঈদগাহ, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭২২১৮৮৫৫১, ০১৭৫৫৮৬৬২২২, ০১৭১২৫৪০৪২০, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by M-W-D