সিলেট ২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০১৬
টার্গেটে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। তালিকা ধরে চলছে হত্যা। চলছে একের পর এক। তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্লগাররা। যে যেভাবে পারছেন নীরবে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন ব্লগার দেশ ছেড়ে গেছেন। দেশ ছাড়ার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন আরও অন্তত ১০-১২ জন। এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুমকিতে থাকা ব্লগারদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি ‘আন-অফিশিয়ালি’ বিদেশ চলে যেতে বলা হচ্ছে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর খড়গ নেমে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরই ১৫ই ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নামে একজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়। মূলত তখন থেকেই ব্লগারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দানা বাঁধে। অনেকে ব্লগারই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ ব্লগ লেখাও বন্ধ করে দেন কিছুদিন। পরের বছর ২০১৪ সাল মোটামুটি শান্তভাবে চললেও গত বছর মার্কিন নাগরিক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যার মাধ্যমে আবারও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক আক্রমণ শুরু হয়। এ অবস্থায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন মুক্তমনা ব্লগাররা। আত্মগোপনে থেকেও রেহাই মেলেনি তাদের। ব্লগার ওয়াসিকুর রহমান বাবু ও নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার হুমকি পেয়ে অনেকটা আত্মগোপনে থাকতেন। তার পরও দুর্বৃত্তরা তাদের কুপিয়ে হত্যা করেছে। ব্লগাররা বলছেন, একের পর এক ব্লগার হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারার কারণে অনেকেই নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া ব্লগাররা হলেন- আসিফ মহিউদ্দিন, ওমর ফারুক লুক্স, অনন্য আজাদ, শাম্মী হক, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ, সৈকত চৌধুরী, সুব্রত শুভ, ক্যামেলিয়া কামাল, রতন (সন্ন্যাসী), সবাক, কৌশিক, পারভেজ আলম, অমি রহমান পিয়াল, শামীমা মিতু, আজম খান, মাহমুদুল হক মুন্সি ওরফে বাঁধন, তন্ময় প্রমুখ। ব্লগার সূত্র জানায়, ব্লগারদের বেশির ভাগই গত দুই বছরে বেশি দেশ ছেড়েছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্লগার নিরাপত্তাজিনত কারণে দেশ ছাড়েন। ব্লগার ও লেখক সৈকত চৌধুরী গত বছরের ২০মে দেশ ছেড়ে যান। ড. হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ হুমকির কারণে দেশ ছাড়েন গত বছরের ২৯শে জুলাই। ব্লগার শাম্মী হক জার্মানিতে চলে যান গত বছরের অক্টোবরে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্ব দেয়া মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন ও অমি রহমান পিয়াল দেশ ছাড়েন গত বছরের নভেম্বরে। প্রায় একই সময়ে দেশ ছেড়ে যান সাংবাদিক ও ব্লগার শামীমা মিতুও। ব্লগার সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্লগার ক্যামেলিয়া কামাল, অমি রহমান পিয়াল, সুব্রত শুভ ও আজম খান বর্তমানে সুইডেনে রয়েছেন। পারভেজ আলম রয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। শাম্মী হক, অনন্য আজাদ, তন্ময়, আসিফ মহিউদ্দিন ও মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন রয়েছেন জার্মানিতে। সন্ন্যাসী রতন রয়েছেন নরওয়েতে। ব্লগার মনির রয়েছেন ফ্রান্সে। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন ব্লগার ও প্রকাশক শুদ্ধশ্বরের কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলও সবার অগোচরে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে যান। জার্মানি চলে যাওয়া ব্লগার শাম্মী হক গতকাল মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি আমার দেশে ফিরতে চাই, প্রাণ খুলে নিজের ভাষায় কথা বলতে চাই। আমার সহযোদ্ধাদের খুনের বিচার চাই।’ ক্ষমতাসীন সরকারকে উদ্দেশ করে শাম্মী বলেন, ‘যে রক্তে নিজের হাত লাল করেছে এবং মৌলবাদীদের হাতকে লাল করার জন্য প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এর বিচার একদিন হবেই। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।’ দেশ ছেড়ে যাওয়া মানে পরাজয় স্বীকার করা কি না- জানতে চাইলে ব্লগার শাম্মী হক বলেন, এটা একদিক থেকে সঠিক আবার ভুলও। প্রথমত, দেশ ছাড়ার পরও অসংখ্য থ্রেট আসছে। তারা যদি আমাদের দেশ ছাড়াটাকে তাদের সাফল্যও ভেবে নেয়, তাহলে হুমকি এমনকি বিদেশে অবস্থানরত ব্লগারদের হিটলিস্ট তৈরি করছে কেন? শাম্মী বলেন, বরং যে দেশ ছাড়তে পারছে, সে আরও বেশি লেখালেখি করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের মূল যুদ্ধই তো লেখার মাধ্যমে। শাম্মীর ভাষ্য, সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত অবস্থান নেয়া হলে এত ব্লগারকে জীবন দিতে হতো না। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্যই এভাবে একের পর এক ব্লগার খুন হচ্ছেন। শক্ত হাতে বিচার করলে এগুলো হতো না।’ ব্লগার-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সর্বশেষ নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর অনেক ব্লগার বিদেশ যাওয়ার জন্য আবার চেষ্টা শুরু করেছেন। নিজের জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়ার আর কোনো বিকল্প দেখছেন না তারা। এজন্য অনেকেই বিদেশে থাকা ব্লগারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্রয় পাওয়ার প্রক্রিয়া জানার চেষ্টা করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ১০-১২ জন ব্লগার দেশ ছাড়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সহযোগী ব্লগার বা তারা নিজেদের নাম প্রকাশ করতে নিষেধ করছেন।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, যেসব ব্লগারের ওপর হুমকি বা থ্রেট রয়েছে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার পাশাপাশি সতর্কতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে সর্বশেষ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমউদ্দিনকে হত্যার পর হুমকিতে থাকা ব্লগারদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ব্লগারদের কেউ নিরাপত্তাজনিত কারণে জিডি করতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশকে জিডি নেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বিধান করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। একই সঙ্গে ব্লগারদের মধ্যে কারা হুমকিতে বা থ্রেটের মধ্যে রয়েছেন তাদের অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : মোঃ আফছর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক : মস্তাক আহমদ পলাশ
নির্বাহী সম্পাদক : নাজমুল কবীর পাভেল, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : উজ্জ্বল চৌধুরী।
মস্তাক আহমদ পলাশ কর্তৃক নিউ বর্ণমালা অফসেট প্রেস, রাজা ম্যানশন, জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে মুদ্রিত ও ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা (লিফটের-৮), জিন্দাবাজার, সিলেট থেকে প্রকাশিত।
ইমেইল : sylheterdinkalnews@gmail.com,
ফেইসবুক পেইজ : The Daily Sylheter Dinkal ০১৭১২৫৪০৪২০, ০১৭১১৯৮৪০৬৫, ০১৭১৮৫৩৮০৪৫ , ০১৭১১-৩২৬০৯১, শ্রীহট্ট মিডিয়া লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান।
Design and developed by best-bd